"আঙ্কেল গেইটটা খোলেন না" গণঅভ্যুত্থান, কুমিল্লা ২০২৪ইং" বইটি ইতিহাসের অনন্য দলিল

“আঙ্কেল গেইটটা খোলেন না” গণঅভ্যুত্থান, কুমিল্লা ২০২৪ইং” বইটি ইতিহাসের অনন্য দলিল

প্রকাশিত: ১:০৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১০, ২০২৫

“আঙ্কেল গেইটটা খোলেন না” গণঅভ্যুত্থান, কুমিল্লা ২০২৪ইং” বইটি ইতিহাসের অনন্য দলিল
শামছুল আলম রাজন,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার।।
এ বছর বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে কুমিল্লার বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও টকশো উপস্থাপক শাহাজাদা এমরানের নতুন বই “আঙ্কেল গেইটটা খোলেন না” গণঅভ্যুত্থান, কুমিল্লা ২০২৪”। জুলাই বিপ্লব নামে পরিচিত ছাত্র-জনতার আন্দোলন হচ্ছে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক গণঅভ্যুত্থান। যা ২০২৪ সালের ৫ জুন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অগণিত প্রাণ বিসর্জন দেয়ার মধ্য দিয়ে বিগত ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। ঐতিহাসিক এই গণঅভ্যুত্থানে সারাদেশের মধ্যে কুমিল্লার ভুমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ১১ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর কুমিল্লাতেই প্রথম হামলা হয়। আর এই হামলার প্রতিবাদে গর্জে উঠে সারা দেশ। সেই থেকে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন, পদত্যাগ করে পালাতে বাধ্য হয় শেখ হাসিনা। গণঅভ্যুত্থানে কুমিল্লার ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধাদের সেইদিনগুলোর অভিজ্ঞতা ও তরতাজা ঘটনা প্রবাহ নিয়েই লেখক বইটি লিখেছেন। এর ফলে ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে জুলাই বিপ্লবের সঠিক ইতিহাস।
বইটির নাম ও প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে পাতায় পাতায় জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস সুনিপুণ ভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন লেখক। শেখ হাসিনা পালানোর ২ দিন আগে অর্থাৎ ৩ আগস্ট কুমিল্লা পুলিশ লাইন এলাকায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষাপেতে কিছু শিক্ষার্থী একটি আবাসিক ভবনের গেইটে গিয়ে আর্তনাদ করতে থাকে “আঙ্কেল গেইটটা খোলেন না”।
এধরণের একটি ভিডিও তাৎক্ষনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। দলমত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের সাথে রাস্তায় নেমে আসে সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীদের এ আর্তনাদ হাসিনার স্বৈরশাসনের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়। তাই লেখক ঐতিহাসিক এ আর্তনাদকেই বইয়ের নাম হিসেবে নির্ধারন করেন। এ বিষয়টা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। এছাড়া বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায় কুমিল্লার জুলাই বিপ্লবের খুঁটিনাটি প্রায় সব বিষয় সঠিক ভাবে উঠে এসেছে। গণঅভ্যুত্থানে ফ্রন্ট লাইনের ৫৪ জন যোদ্ধাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা লেখক বইটিতে সন্নিবেশন করেছেন। এতে স্বাভাবিক ভাবেই বলা যায় বইয়ের সকল তথ্যের সর্বোচ্চ বিশুদ্ধতা রক্ষা পেয়েছে। কয়েকজন ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধার বর্ণনাপড়তে গিয়ে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। কিছু কিছু বর্ণনা পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে এ যেন আরেক মুক্তিযুদ্ধ যা প্রথমবার হয়েছিল ১৯৭১ সালে। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক প্রায় সব বিষয় জুলাই বিপ্লবের দিনগুলোর সাথে মিল পেয়েছি বইটি পড়ে।
আমি বইটিকে জুলাই বিপ্লবের অনন্য দলিল বলতে চাই। লেখক শাহাজাদা এমরান বইটিতে শুধু বিপ্লবের ঘটনা প্রবাহই তুলে ধরেননি তিনি বইয়ে অনেকগুলো ছবি, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও নিহত আহতদের তথ্যও অন্তরভুক্ত করেছেন। যা বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে সেই সাথে এনে দিয়েছে অনন্য দলিলের স্বীকৃতি।
“আঙ্কেল গেইটটা খোলেন না” গণঅভ্যুত্থান, কুমিল্লা ২০২৪” লেখকের ৪র্থ বই। আগের ৩টি বই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। আগের ৩টি বইয়ের মত এ বইটিও ইতিমধ্যে বেশ পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাইলে কুমিল্লা ও কুমিল্লার বাহিরের সকলের বইটি পড়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। সেই সাথে প্রশাসনের নিকট দাবি জানাতে চাই কুমিল্লা সহ দেশের সকল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি “আঙ্কেল গেইটটা খোলেন না” গণঅভ্যুত্থান, কুমিল্লা ২০২৪” বইটিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এছাড়া দেশের সকল সরকারি, বেসরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক লাইব্রেরিগুলোতেও বইটিকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি। এতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে গণঅভ্যুত্থানের সঠিক তথ্য। বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা পাবে ইতিহাস। সবাইকে বইটি পড়ার অনুরোধ জানিয়ে আমি আবারো বলতে চাই বইটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অনন্য দলিল।

ঘরে বসে বইটি সংগ্রহ করতে কল করুন- ০১৬১০৩১১৭৭৬