(খোশ আমদেদ মাহে রমজান) শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় মাহে রমজানের ভূমিকা (খোশ আমদেদ মাহে রমজান) শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় মাহে রমজানের ভূমিকা কুমিল্লার খবর কুমিল্লার খবর Cumillarkhobor প্রকাশিত: ৫:৪৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৫ (খোশ আমদেদ মাহে রমজান) শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় মাহে রমজানের ভূমিকা গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির,বুড়িচং প্রতিনিধি।। বহমত, বরকত ও মাগফেরাতের বার্তা নিয়ে মাহে রমজান চলছে, আলহামদুলিল্লাহ। মুসলিম জাতি এ মাসে নিজেদের আত্মশুদ্ধি অর্জনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন।জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে সামাজিক শান্তি, শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষায় মাহে রমজানের ভূমিকা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং সম্প্রীতি সুদৃঢ় করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যাতে কেউ এই ইতিবাচক পরিবর্তনকে নস্যাত করে দিতে না পারে, এজন্য আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। এক্ষেত্রে মাহে রমজানের শিক্ষা ও মূল্যবোধ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করি।মাহে রমজান তাকওয়া (আত্মসংযম), সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও সামাজিক সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। এই মাসে মুসলমানরা সিয়াম পালনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের চর্চা করেন। এ সময় ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই একই কাতারে দাঁড়ান, যা সামাজিক সমতা ও সম্প্রীতির প্রতীক। বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল মুসলিম প্রধান দেশে রমজানের ত্যাগের শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা অত্যন্ত যৌক্তিক ও সমাজের চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস মাহে রমজান উপলক্ষ্যে দেশবাসীর উদ্দেশে বাণী দিয়েছেন। তিনি সবাইকে মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানিয়েছেন। তার বাণীতে তিনি সামাজিক নিরাপত্তা, বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের কথা উল্লেখ করেছেন। তার ভাষায় ‘ধনী-গরিব সবার মধ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বোধ প্রতিষ্ঠায় আসুন, পবিত্র মাহে রমজানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যাবতীয় ভোগ-বিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ, উশৃঙ্খলতা ও সংঘাত পরিহার করি; জীবনের সর্বস্তরে পরিমিতিবোধ ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে শান্তিপ্রিয় জাতি গঠনে রমজানের শিক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত। সামাজিক বৈষম্য দূর করে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের দুর্নীতির যে বদনাম আমাদের রয়েছে, তা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে আসুন সবাই মিলে কাজ করি এবং দেশটাকে ভালবাসি। এ মাস কোরআন নাজিলের মাস। কোরআনে মানবজাতির ব্যক্তি, সমাজ ও সমগ্র জাতি পরিচালনার চমৎকার নীতি পদ্ধতি ও আইনি সব বিধি বিধান রয়েছে। আসুন, বুঝুন এবং কোরআনের আলোকে জীবন গড়ুন।মাহে রমজান উপলক্ষে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে খাবার-দাবার ও পোশাক-আশাকসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ছাড় দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যে ৫০ ভাগ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলিম ব্যবসায়ীদের এখনো এই ব্যাপারে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা গড়ে ওঠেনি। আমাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন কবে হবে? পবিত্র আল কোরআনের মাধ্যমে রাসুল (সা.) এবং পরবর্তীকালে খুলাফায়ে রাশেদাসহ সব মুসলিম শাসকগণ খেলাফত আলা মানহাজিন নবুয়ত।-এর মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ ও আত্মকেন্দ্রিক শক্তি প্রদর্শনের পরিবর্তে সম্প্রীতি ও ভালোবাসার ছোঁয়া লেগে থাকত। আজকে মুসলমানদের নৈতিক ব্যর্থতার কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সাধারণভাবে মুসলিম বিশ্বে মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন ওঠে নারী অধিকার, বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসীদের সঙ্গে হিংসাত্মক আচরণের। অথচ নারী জাতির মুক্তির এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে ইসলাম। আর আজকের ইহুদি জাতিকে ওসমানয়িরা নিরাপত্তা না দিলে স্পেন ও জার্মানিতে যেভাবে ইহুদিকে নিধন করা হয়েছে, এখন তাদের কোনো নাম-নিশানাই থাকত না। মদিনার সমাজ ও মক্কা বিজয়ের পর কারো ওপর বিশ্বাসের কারণে অত্যাচারের কোনো রেকর্ড নেই। বর্তমানে অবৈধ সম্পদ বানানো, সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতি, অবৈধ ক্ষমতার চর্চাসহ এমন কোনো অভিযোগ নেই, যা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ওঠে না। সব অভিযোগ আমলে না নিলেও নৈতিকতার মানদণ্ডে আমরা জাতি হিসেবে অনেকটা পিছিয়ে, একথা বলতেই হবে। হযরত আবু বকর, ওমর, আলি ও ওসমান (রা.)-এর অনুসারী! আদর্শ জাতির ও ধর্মের অনুসারী হয়ে আমাদের এ বিচ্যুতির কারণ আর কিছুই নয়, মূলত কোরআনের সঠিক শিক্ষা থেকে আমরা দূরে সরে গেছি। কোরআনকে যথাযথভাবে জীবনে ও সমাজে বাস্তবায়নের পথকে বাঁকা করে ফেলেছি। যার ফলে সমাজে এত বৈষম্য। মানবিকতার আকাল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র সময় মাহে রমজান ও আল কোরআন। সংযমের শিক্ষার মাধ্যমে কোরআনের মূল শিক্ষাকে নিজের মধ্যে বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি শোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব। ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার পরিমণ্ডল থাকলেই রক্ষক কখনো ভক্ষক হতে পারবে না। কেননা দুর্নীতি করে জনগণের ক্ষমতা ও সম্পদ কুক্ষিগত করে দুনিয়ার আদালতে ছল-চাতুরীর মাধ্যমে মুক্তি পেলেও আল্লাহর দরবারে কোনো ইনজাস্টিস হবে না তখন অবৈধ এ সম্পদের হিসাব পাই পাই করে দিতে হবে। এ চেতনা হৃদয়ে ধারণ করলেই দুর্নীতিমুক্ত মানবিক সমাজ গঠন সম্ভব। সত্যিকার অর্থে পবিত্র রমজানকে আমরা ব্যক্তি ও সমাজের এ দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তির মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা করতে পারি। তা না হলে সাহরি, ইফতার, তারাবিসহ দান-খয়রাতের সব আয়োজন বিফলে যাওয়ার আশঙ্কাই প্রবল। সুরা বাকারার ১৮৩ থেকে ১৮৬ নম্বর আয়াতে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা তো মুসলমান, আবার বীরের জাতি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছি। ২০২৪-এ ছাত্র-জনতার ঐতিহাসক বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদমুক্ত করে দ্বিতীয় স্বাধীনতার স্বাদ নিচ্ছি। এ অবস্থায় কেন আমরা পৃথিবীতে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ? আমরা তো কোরআনের অনুসারী! আমরা তো রাসুল (সা.) এর উম্মত । আমরা মাহে রমজানকে ইবাদত ও তাকওয়ার এক অনন্য দিক বা সময় বলে মানি এবং জানি। বলা হচ্ছে,’যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতেসাবসহ সাওম পালন করে, আল্লাহ-তায়ালা তার আগের সব গুণাহ (ছগিরা) মাফ করে দেন’। এখানে ঈমান ও ইহতেসাব অর্থই হলো নিজের বিশ্বাসের পূর্ণতা আর ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক সব পর্যায়ের অন্যায়, দুর্নীতি থেকে নিজেকে রক্ষার চেষ্টাই ইহতেসাব। রমজানে আমার ব্যক্তিগত আত্মসমালোচনার চেতনাকে শানিত করতে হবে এবং নিজের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে নিজেকে অতি ক্ষুদ্রভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এভাবে দেখলে আমরা রমজান কেন, সারা বছর কোনোভাবেই খাদ্যে ভেজাল মেশাতে পারি না। সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিতে পারি না। এ মাসে জাকাত আদায় করা উত্তম। সব অভাবগ্রস্ত মানুষকে যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করা। ইফতার ও সাহরির সময় পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন মজবুত হয়। পরিবার ও সমাজের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার মাধ্যমে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা যায়। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে পরিবার ও সমাজের ভিত্তি মজবুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শক্তিশালী সামাজিক কাঠামোই দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। মাহে রমজানের শিক্ষা ও মূল্যবোধ বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে সামাজিক শান্তি, শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষায় কাজে লাগানোর আরেকটি অন্যতম দিক হলো শিক্ষার সংস্কার। আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলিত সাধারণ ও ধর্মীয় শিক্ষা বর্তমান আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের যুগে যথাযথ যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে ব্যর্থ। এ থেকে বের হতে হলে সামগ্রিক শিক্ষাকে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার ভিত্তিতে সাজাতে হবে। রাষ্ট্র মেরামতের এ কাজকে রজমানের শিক্ষায় আরো ত্বরান্বিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে নিজের নিরাপত্তার ন্যায় প্রতিটি নাগরিকের [মুসলিম-অমুসলিম। নিরাপত্তার বিধান করা কোরআনের শিক্ষা, যা রমজান মাসে প্রাপ্ত। এ মাসের তাকওয়া, সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও সামাজিক দায়িত্ববোধের শিক্ষা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। রমজানের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্প্রীতি ও সংহতির পরিবেশ দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে। সত্যিকার অর্থে, রমজানের শিক্ষাকে সামাজিক জীবনে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগ করা গেলে বাংলাদেশের সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় বিশ্বের সামনে একটি কার্যকর এবং উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে নিজের নাম প্রোজ্জল করে রাখবে, ইনশাআল্লাহ।। লেখক: গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ বিশ্লেষক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও শূরা সদস্য, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটি। SHARES ধর্ম ও জীবন বিষয়: (খোশ আমদেদ মাহে রমজান) শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় মাহে রমজানের ভূমিকা