যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন: প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাকে চান বিশ্বনেতারা?

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন: প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাকে চান বিশ্বনেতারা?

প্রকাশিত: ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জরিপে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। তবে বিশ্বনেতারা এর মধ্যে কাকে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান, তা নিয়েও চলছে তুমুল আলোচনা।

আন্তর্জাতিক খবর ডেস্ক।।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, খুব ঘনিষ্ঠভাবে মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন বিশ্বনেতারা। প্রভাবশালী অনেক নেতাই সমর্থন দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। আবার কমলা হ্যারিসের পক্ষেও রয়েছে একাংশের সমর্থন।কী ভাবছে পুতিনের রাশিয়া? 
কমলা হ্যারিসকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান বলে জানিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে অনেকের মতে, পুতিন এ কথা বলেছেন হয়তো ঠাট্টা করেই। তার অনেক কথা ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি আসলে ট্রাম্পের জয়ের পক্ষে।
চাথাম হাউসের রাশিয়া এবং ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো টিমোথি অ্যাশ আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘পুতিন বিভিন্ন কারণে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পছন্দ করবেন।’তার মতে,
পুতিন মনে করেন, ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি নমনীয় এবং তিনি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা কমানো ও রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার মতো পদক্ষেপ নেবেন।অ্যাশ আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, পুতিন ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে নিজের কর্তৃত্ববাদী রূপই দেখতে পান। পুতিন সম্ভবত মনে করেন যে, তিনি ট্রাম্পকে বোঝেন।’তবে রুশ বিশ্লেষকদের বরাতে বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, মস্কোর কর্মকর্তারা মনে করেন যে, নির্বাচনে যে প্রার্থীই জিতুক না কেন, রাশিয়ার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক মনোভাব বজায় থাকবেই।চীনের শি জিনপিংয়ের অবস্থান কী?মার্কিন নির্বাচনে দুই প্রার্থীর কাউকেই প্রকাশ্যে সমর্থন দেননি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রাশিয়ার মতো, ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় প্রার্থী চীনের প্রতিও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন ট্রাম্প। ২০১৮ সালে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পাল্টা জবাবে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে ১১০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক বসায় চীন। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচিত হলে ট্রাম্প তার সেই আগের অবস্থান থেকে পিছু হটবেন বলে মনে হয় না। তবে ডেমোক্র্যাটরাও বিশ্বব্যাপী চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পারেন। কারণ, বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্পের শুল্ক ঠিক রেখেছিলেন। তদুপরি, চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর, বাইডেন প্রশাসন চীনের তৈরি কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধিরও ঘোষণা দিয়েছে। আর কমলা হ্যারিস জয়ী হলে, তিনি চীনের প্রতি বাইডেনের নীতির ধারাই অব্যাহত রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সাবেক ডিন জিয়া কিংগুওকে উদ্ধৃত করে এনবিসি নিউজ বলছে,পর্দার আড়ালে চীনা কর্মকর্তারা কমলা হ্যারিসের দিকে কিছুটা ঝুঁকে থাকতে পারেন।ইরানের মতো চীনও কমলা হ্যারিসকেই ক্ষমতায় দেখতে চায় বলে মত বিশ্লেষকদের।নেতানিয়াহু কী চান?ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করেননি। তবে এটা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, তিনি ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকেছেন।সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম মেয়াদে নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। ২০১৯ সালে, ইসরাইলি-আমেরিকান কাউন্সিলে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘হোয়াইট হাউজে ইহুদি রাষ্ট্রের (ইসরাইল) জন্য আপনার এই প্রেসিডেন্টের চেয়ে ভালো বন্ধু কখনো ছিল না।’অন্যদিকে নেতানিয়াহু ২০২০ সালের এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ট্রাম্প ‘হোয়াইট হাউজে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় বন্ধু’।তবে বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। বাইডেন শপথ নিলে নেতানিয়াহু তাকে অভিনন্দন জানান। পরে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, এতে তিনি ‘প্রতারিত’ হয়েছেন। যদিও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী পুোনো বন্ধনকে আবার জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। চলতি বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো বাসভবনে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন নেতানিয়াহু। এদিকে, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলে বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে। গত ৪ অক্টোবর বাইডেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, নেতানিয়াহু ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে আসছেন কিনা তা তিনি জানেন না। প্রতিবেদন এবং জল্পনা রয়েছে যে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ‘উদ্দেশ্যমূলক’ একটি চুক্তি করেছেন।নেতানিয়াহুর ডাকনাম উল্লেখ করে বাইডেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন,আমার চেয়ে কোনো প্রশাসন ইসরাইলকে বেশি সাহায্য করেনি, কেউই না। এবং আমি মনে করি, বিবি’র (নেতানিয়াহু) এটি মনে রাখা উচিত।ইউরোপীয় ও ন্যাটো নেতাদের সমর্থন কার ওপর?কমলা হ্যারিসকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান বেশিরভাগ ইউরোপীয় নেতা।জার্মান প্রেসিডেন্ট ওলাফ শলৎস সাংবাদিকদের বলেছেন,আমি তাকে ভালো করে চিনি। তিনি অবশ্যই একজন ভালো প্রেসিডেন্ট হবেন।এদিকে, ট্রাম্প একাধিকবার ন্যাটো ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। যদিও ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বরাতে পলিটিকোর রিপোর্ট বলছে, এই জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম যুক্তরাষ্ট্রের।বলা হচ্ছে, ন্যাটো সম্পর্কে অভিযোগ থাকলেও আশা করা হচ্ছে, ট্রাম্প ন্যাটো মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে চাইবেন।ভারত কী চায়?ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও, ২০২০ সালের নির্বাচনে বিজয়ের জন্য বাইডেনকে অভিনন্দন জানানো প্রথম বিশ্ব নেতাদের একজন ছিলেন মোদি। চ্যাথাম হাউসের দক্ষিণ এশিয়া, এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো চিতিগজ বাজপেই আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘মোদি কোনো একজন প্রার্থীকে (মার্কিন নির্বাচনে) অন্যজনের চেয়ে বেশি সমর্থন দিচ্ছেন বলে আমি মনে করি না।’চ্যাথাম হাউসের এক নিবন্ধে বাজপেয়ী লিখেছেন, চীনকে দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখার বিষয়ে যুক্তিযুক্তভাবে যতটা ঐকমত্য রয়েছে, ঠিক একইভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা এবং এটিকে দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখার বিষয়ে ওয়াশিংটনে উচ্চমাত্রার দ্বিপক্ষীয় ঐকমত্য রয়েছে।ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক উইলসন সেন্টার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান আল জাজিরাকে বলেছেন, ভারত সরকার উভয় প্রার্থীর (ট্রাম্প ও কমলা) পক্ষেই ভালো-মন্দ বিবেচনা করবে।অর্থাৎ, সরাসরি কোনো প্রার্থীকেই সমর্থন দিচ্ছে না ভারত সরকার।তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মোদিকে নিজের ‘ভালো বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া, ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও জানান তিনি