রাস্তা ছাড়াই খালের ওপর নির্মান হচ্ছে ৫ কোটি টাকার সেতু

রাস্তা ছাড়াই খালের ওপর নির্মান হচ্ছে ৫ কোটি টাকার সেতু

প্রকাশিত: ২:১৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২৫

রাস্তা ছাড়াই খালের ওপর নির্মান হচ্ছে ৫ কোটি টাকার সেতু

স্টাফ রিপোর্টার।।
কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় রাস্তা ছাড়া নির্মাণ হচ্ছে খালের ওপর পাঁচ কোটি ১২ লাখ টাকার সেতু। যেখানে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে তার এক পাশে নেই কোনো সংযোগ রাস্তা, অন্য পাশে রয়েছে গ্রামীণ ভাঙ্গাচোরা কাঁচা রাস্তা। নির্মাণাধীন এই সেতুর চারপাশে রয়েছে শত শত বিঘা ফসলি জমি। অপ্রয়োজনীয় এ সেতু নির্মাণে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হলেও সুফল পাবে না এলাকাবাসী। ছোট্ট খালের উপর এত টাকার ব্যয়ে রাস্তা ছাড়া সেতু নির্মাণ নিয়ে রয়েছে এলাকাবাসীর ক্ষোভ। এছাড়া সাতশ মিটার দূরে একই খালের উপর প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে আরেকটি গার্ডার ব্রিজ। শুধুমাত্র সরকারি টাকা লুটপাট ও অপচয় করে এ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি সেতুটি নির্মাণের পর সংযোগ রাস্তা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রী নারায়নকান্দি গ্রাম সংলগ্ন খালের উপর ৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থের গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের ৫ তারিখে কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। যার মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে তা চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। সেতুর দুইপাশে ১১০ মিটার রাস্তা নির্মাণও বরাদ্দও একই প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে ম্যাক্স ইনফ্যাকচারাল লি. নামে প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বলরামপুর ইউনিয়নে দক্ষিণ শ্রী নারায়নকান্দি গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার গ্রামীণ ভাঙ্গাচোরা কাঁচা রাস্তা রয়েছে। গ্রামের প্রবেশমুখে খালের উপর ঝুঁকিপূর্ণ অনেক পুরানো একটি সেতু রয়েছে। দেড় কিলোমিটার কাঁচা সড়কের পর দক্ষিণপাড়া বায়তুল জান্নাত কুয়েতী জামে মসজিদের সামনে গার্ডার ব্রিজটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ব্রিজের কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুর পশ্চিম পাশে মসজিদের পর থেকে কোন সংযোগ রাস্তা নেই। নির্মাণাধীন সেতুর পূর্বপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে ফসলী জমি। অর্থ্যাৎ প্রায় দুই কিলোমিটার ফসলী জমির পর বলরামপুর গ্রামের বসতি। রাস্তাবিহীন উক্ত স্থানে সেতুর প্রায় ৬০ ভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো উক্ত সেতুর প্রায় ৭’শ মিটার দূরে একই খালে বলরামপুর গ্রামবাসীদের যাতায়াতের জন্য প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
বলরামপুর গ্রামের মোস্তাক বলেন, বলরামপুর নয়াবাজার থেকে সে ব্রিজটি হচ্ছে এটি দিয়েই আমরা উপজেলা সদরে যেতে পারবো। তবে রাস্তা ছাড়া দক্ষিণ শ্রী নারায়নকান্দি সংলগ্ন একই খালে কেন আরেকটি ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে সেটা বলতে পারবো না।

দক্ষিণ শ্রী নারায়নকান্দি গ্রামের তপন বলেন, খালের উপর সেতু হচ্ছে কিন্তু রাস্তা নেই। আল্লাহ জানে কবে রাস্তা হয় আর এই ব্রিজ কবে কাজে লাগে। এছাড়াও ব্রিজের কাজ হচ্ছে ধীর গতিতে। একই গ্রামের আক্তার হোসেন বলেন, শুনেছি ব্রিজ নির্মাণ হলে রাস্তা হবে। তবে ছোট্ট খালে রাস্তা ছাড়া এত বড় ব্রিজ নির্মাণ করা উচিত হচ্ছে না। রাস্তা থাকলে ছোট ব্রিজ হলেও চলতো।

উত্তর শ্রী নারায়নকান্দির মুক্তার হোসেন বলেন, দক্ষিণ শ্রী নারায়নকান্দি থেকে উত্তর শ্রী নারায়নকান্দি আসার জন্য একটি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। খালের উপরে সেতু নির্মাণের চেয়ে আগে আমাদের রাস্তাটি পাকাকরণ জরুরী ছিল। অজথায় সরকারি টাকা অপচয় করে পাশাপাশি দুটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। শুধুমাত্র সরাসরি অর্থ লুটপাট করার জন্য।

এবিষয়ে ম্যাক্স ইনফ্যাকচারাল লিমিটেড এর প্রজেক্ট ইনচার্জ মো. জিয়াউল হাসান শুভ্রর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ব্রিজের কাজ প্রায় ৬০ ভাগ শেষ, এখন শুধু ছাদ ঢালাই দিবো। কিন্তু ঈদের ছুটির পর এসে দেখি ব্রিজের পশ্চিম পাশের কাঁচা রাস্তায় মাটি ফালাচ্ছে, এই জন্য মালামাল আনতে না পাড়ায় কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে একই খালে পাশাপাশি দুটি ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।
উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরের জুনে ব্রিজটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষ হলেই রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই খালে পাশাপাশি দুটি ব্রিজ নির্মাণে বিষয়ে তিনি বলেন প্রয়োজনেই পাশাপাশি দুটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।