একটি আত্মহননের গল্প....পুলিশ কর্মকর্তার। একটি আত্মহননের গল্প….পুলিশ কর্মকর্তার। কুমিল্লার খবর কুমিল্লার খবর Cumillarkhobor প্রকাশিত: ৩:৩১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২৪ #একটি_আত্মহননের_গল্প আমি সেই(২৫২+৫৯) জন হতভাগা ক্যাডেট এসআই এর একজন। “সুবীর রায়” #কথা ছিলো আর মাত্র ১১দিন পর স্বপ্নের নীল পোশাক গায়ে জড়িয়ে শোল্ডারে র্যাংক ব্যাজ, লেনিয়ার আর বুকে পুলিশের নেমপ্লেট লাগিয়ে সাধারণ মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবো।যে স্বপ্ন আমি লালায়িত করেছি দীর্ঘ বছর, যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কণ্টকাকীর্ন পথে হেটেঁছি বিগত ২৫/৩০ বছর এবং লাস্ট ১বছর ব্যয় করেছি নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা প্রমান করার জন্য আর সব কিছুকে অতিক্রম করে সারদার মাঠে নিজেকে শীতের সময় ঠান্ডায় বরফের ন্যায় জমিয়েছি, বৃষ্টিতে ভিজিয়েছি, গ্রীষ্মের ৪২/৪৫° তাপমাত্রার রোদে নিজেকে আরো ১ বছর পুড়িয়ে যখন চুড়ান্ত ভাবে প্রস্তুত করে যখন দেশের সেবায় নিয়োজিত হবো ঠিক তখন এতো দিনের স্বপ্নকে দু:স্বপ্ন বানিয়ে বুক পকেটে গোজে দেওয়া হলো অব্যাহতি পত্র। #অভিযোগ দেওয়া হলো শৃঙ্খলা ভঙ্গের! ব্যাস!৩০ বছরের স্বপ্নকে ৩০ সেকেন্ডে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হলো।সংবাদটা যখন পাই তখন আমি পি.এল ছুটিতে সেই মুহুর্তে মনে হচ্ছিলো সংবাদটা সত্যি তো!! আমার সেন্স সঠিক কাজ করছে তো? আমার হৃদক্রিয়া ঠিকঠাক কাজ করছে তো??এটা কি দু:স্বপ্ন!!কিন্তু না এটাই ছিলো সত্য এবং নিঘুর সত্য!! #সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অব্যাহতি পাওয়া ২৫২ জন সাব-ইন্সপেক্টের লিস্টের আমিও একজন। কথা হলো প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে STAMFORD UNIVERSITY, BANGLADESHথেকে BBA, MBA কমপ্লিট করেছি। এই দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের টার্ন করার ক্ষেত্রে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগন ও আমার সহপার্টিরা এবং আমার এলাকার মানুষ বলতে পারবে আমার আচরণগত দিক দিয়ে আমি কেমন।নিজের সম্পর্কে ক্লারিফিকেশন দিবো না শুধু এইটুকু বলবো আমার বাবা একজন কৃষক ও মা গৃহীনি পড়াশোনার খরচ কাকারাই বহন করেছে। আমি একমাএ ছেলে ।অনেক কষ্টকরে মা-বাবা, কাকারা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। করোনা কালীন সময়ে সবাই যখন পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত তখন আমি বৈশাখে বাবার সাথে নিজ জমিতে বাবাকে সাহায্য করতে ব্যস্ত। তার পর সৃষ্টিকর্তার কৃপায় বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে ও বাংলাদেশ নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ে জব পাই। সেখানে ১০ মাস জব করার পর ৪০ তম এস আই এ নিয়োগ প্রাপ্ত হই।(এখানে বলে রাখা ভালো ৩৯ তম এস আই পরীক্ষায় আমি ভাইবা থেকে বাদ পড়ি)বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য এস.আই এ জয়েন করি।যাই হোক ফাইনালি সব কিছু চিন্তা করে নীল পোশাকের প্রতি ভালোবাসার টানে এবং বাবার স্বপ্ন পূরনের প্রত্যাশা নিয়ে এক শিক্ষক কাকার কাছ থেকে ২০০০০ টাকা ঋন করে এস আই এ যোগদান করতে সারদার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাই। কিন্তু এখন ২৫২ জনের লিস্টে আমিও বাদ পড়ি। সাথে আমার সাজানো স্বপ্ন নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেলো।স্তম্বিত হয়ে গেলাম আমি নিজেও।পরিবারের প্রতিটা মানুষ নিস্তব্দ!বাবা,মায়ের চোখের জল, আমার জীবনের এই করুন পরিনিতি এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দায় আমি কাকে দিবো?এটা কি আমার ভাগ্য নাকি অন্যায় ভাবে আমার জীবনের স্বপ্ন গুলা মুছে দেওয়া হচ্ছে??ব্যপারটা আমি না নিজে মানতে পারছি,না পরিবারের মানুষ!আমাদের ২৫২ টা পরিবারের অসহায়ত্বের বেদনা কি কেউ বুঝবে??এ কেমন বৈষম্যের স্বীকার হলাম??আমরা কি এর সুবিচার পাবো ???রাষ্ট্র আমাদের সাথে এমন আচরণ কেন করছে??দেশের বর্তনাম নীতি নির্ধারক যারা আছেন তারা এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার ও কি ভেবেছে এতো দিন পরে এসে অব্যাহতি দিলে এতো গুলি পরিবারের কি বেহাল দশা হতে পারে?যদিও আনিত অভিযোগটি সত্য নয়,কতৃপক্ষ চাইলে সুষ্ট তদন্ত করতে পারতো।এখানে অনেকেই আছে যাদের আর্থিক অবস্থা খুব ই শোচনীয় এবং অনেকে জব ছেড়ে গিয়েছিল স্বপ্ন পুরনের জন্য,অনেকের চাকুরির বয়স শেষ।আসলে আমি কারে দোষ দিবো সব দোষ হয়তো আমার ভাগ্যের। #নয়তো ২টা সরকারী চাকুরী পাই এস আই তে আসার আগে ও এস আই তে জয়েন করেও ২ টা জব হলো জয়েন করতে পারি নাই অার এখন আমি উদ্দেশ্যহীন,সম্বলহীন, নি:স্ব বেকার। #ট্রেনিং চলা কালীন সময়ে কতটা কষ্ট করে সব কিছু সামাল দিয়েছি এক মাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ জানে না।যারা সারদায় ট্রেনিং করেছে তারাই ফিল করতে পারবে সেখানে কতটা শারিরীক, মানসিক পরিশ্রম করতে হয়।বিনা বেতনে ১ বছর ট্রেনিং করেছি। সরকারী খরচে খাওয়া দাওয়া,মাস শেষে ১৮১৫ টাকা পকেট মানি দিতো যেখানে রুম বয়ের বেতন দিতে হতো ২৫০০ টাকা বাকি টাকাটা মেনেজ করার জন্য কাছের এক ছোট ভাই প্রতি মাসে জোড় করে আমাকে ২০০০টাকা পাঠাতো আর বলত ভাই ট্রেনিং শেষ করে আসেন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে টাকা পয়সা পরে দিয়েন বাকিটা পরে বুঝব।আমার আর বুঝা হলো না কিছুই এর আগেই ভাগ্য আমাকে চাকুরী থেকে বিতাড়িত করেছে।জানিনা তার ঋন আমি কিভাবে শোধ করব কিন্তু এই মানুষটার প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো। #আমার এতো দিনের সাজানো স্বপ্ন এইভাবে যারা নি:শেষ করে দিয়েছেন তাদের বিচার আমি সৃষ্টি কর্তার উপর ছেড়ে দিলাম।উপরে তিনি সব দেখছেন সব জানেন।জানি আমার এই আকুতি ঈশ্বরের কাছে পৌছাবে না কারন ঈশ্বর থাকেন ভদ্র পল্লীতে উনি আমাদের ডাক শুনবেন না।তবে আমার স্বপ্ন ভঙ্গের দায় কার?? এই প্রশ্ন আপনাদের কাছে রেখে গেলাম!এই চাকুরীকে ঘিরেই আমি আমার পরিবারকে নিয়ে স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম কিন্তু আপনারা সেটা এক নিমিষেই ঘুরে বালি করে দিয়েছেন।ট্রেনিং এ থাকা কালীন সময়ে অাগের জবের বেতনে ছোট্ট একটা স্বপ্নের বাড়ি বানিয়েছিলাম যদিও কাজ এখনো শেষ হয় নি। মাথায় ঋনের চাপ,ছোট কাকাতো ভাই গুলির তথা আমার নিজের জীবনকে যে গভীর হতাশায় ডুবিয়ে দিয়েছেন এর বিচার আমি কার কাছে দিবো?? #অনেকে বলছেন আইনি প্রক্রিয়ায় গেলে চাকুরী ফেরত পাবো এক সময়।আরে ভাই যে চাকুরীটা আমার এখন দরকার সেটা পরে পেয়েই আমার কি হবে??আর বাংলাদেশের এই আইনি জটিলতা ওভারকাম করার আর্থিক ও মানসিক সক্ষমতা এই মুহুর্তে আমার কোনটাই নেই। #আমার নিজের জীবনকে এই ভাবে অন্ধকার দিকে টেলে না দিয়ে এর থেকে ভালো হতো যদি 7.62mm রাইফেল কিংবা LMG বুলেট দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে বুকটা ঝাজড়া করে দিতেন। তাইলে হয়ত এতো কষ্ট হতো না।পরিবারের মানুষের অসহায় মুখগুলি দেখতে হতো না। #সব শেষে সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা আমার সাথে যে অবিচার করা হয়েছে তুমি তার বিচার করো।কারো প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই তবে হে রাষ্ট্র তুমি আমাকে আমার অধিকার থেকে শুধু বঞ্চিতই করো নি,তুমি আমাকে শারিরীক ভাবে বাচিঁয়ে রেখেছো কিন্তু মানসিক ভাবে হত্যা করে ফেলছ।একদিন যেন এর সুবিচার হয়। ‘যতবারই হত্যা করো,জন্মাবো আবার দারুন সূর্য হবো,লিখবো নতুন ইতিহাস!!’ SHARES অবসর-পর্যটন বিষয়: একটি আত্মহননের গল্প....পুলিশ কর্মকর্তার।